+880 16 19627810 info@matirmayaecoresort.com

গ্রীষ্মের দুপুর। তীব্র গরমে হাসফাস করছে ক্লান্ত পথিক। একটু পানি পান করা খুব জরুরি। দেখলেন, সবুজ গাছে ছায়াঘেরা একটি কাঁচারাস্তা। রাস্তার দুধারে একের পর এক মাটির ঘর। সে ঘরের মেঝে, দেয়াল, রান্নাঘর সবই মাটির। সেখানে একটু পানি পান করে মিলবে তৃপ্তির সুধা। এই প্রাপ্তি যেন পৃথিবীর সব স্বাদকে হার মানাবে।
এমন অনুভূতি আজও ছিটেফোঁটা পাওয়া যাবে দেশের কিছু অঞ্চলে। এককালে সমগ্র বাংলা জুড়ে দেখা যেত এমন বসতি। বাংলাদেশের গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, যশোর, নওগাঁ, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, মেহেরপুরসহ অনেক জেলায় দেখা যায় মাটির ঘর। কালের বিবর্তনে সৃষ্ট আধুনিকতা কমিয়ে দিয়েছে মাটির ঘরের সংখ্যা।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি ঘর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মাটির ঘরে বসবাস করতে শুরু করেন। মাটির সহজলভ্যতা, প্রয়োজনীয় উপকরণ আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় আগের দিনে মানুষ মাটির ঘর বানাতে বেশ আগ্রহী ছিলেন। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে বাড়ির দেয়াল তৈরি করতেন তারা।

১২-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় অথবা টিনের ছাউনি দেওয়া হতো। শুধু একতলাই নয়, অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত তৈরী করা হতো মাটি ঘর। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের সময় লাগতো ৪৫ থেকে ৬০ দিন। মাটির তৈরি ঘরের দেয়ালে সৌখিন গৃহিণীরা বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে তাদের নিজ-নিজ বসত ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন।

History of Mud Houses in Bangladesh

মানুষের অর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে জীবন মানেরও অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এতে হারিয়ে যেতে বসেছে চিরচেনা মাটির তৈরী ঘরের ঐতিহ্য। শান্তিময় আবাহ, সুজলা, সুফলা, সবুজে ছেয়ে থাকা, গ্রাম-বাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন হলো মাটির ঘর। লাল মাটির এলাকাগুলোতে মাটির ঘর বেশি পাওয়া যায়। এমন একদিন ছিল, সারা গ্রাম হেঁটে এলেও কোনো টিনের ঘর পাওয়া যেত না। একটু অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থবাড়িতে দোচালা টিনের অথবা অঞ্চলভিত্তিক মাটির ঘর চোখে পড়ত। দৃষ্টিনন্দন এসব মাটির ঘর শহরের চার দেয়ালে থেকে দেখা যাবে না, দেখতে হলে চলে যেতে হবে দূরের গ্রামে। যেখানে যান্ত্রিকতা এখনো শেষ করে দেয়নি মানুষের মন ও মানবতাকে। গ্রামে এখনো মানুষের ঘুম ভাঙে পাখ-পাখালির কলরবে। সকালে গোয়াল ঘরে বেঁধে রাখা গাভীর বাছুরটির চিৎকারে।

blank

এক তলা মাটির বাড়ির জন্য বারো থেকে চৌদ্দ ফুট উঁচু দেয়ালে বাঁশ কাঠ বা লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে সিলিং তৈরি করে তার ওপর টিনের ছাউনি দেওয়া হয়। আর দোতলা বাড়ির জন্য তেরো থেকে পঁচিশ ফুট উঁচু দেওয়াল তৈরি করে তেরো ফুটের মাঝে তালগাছের ফালি দিয়ে পাটাতন তৈরি করে দুই থেকে তিন ইঞ্চি মোটা কাঠের ছাউনি দেওয়া হয়। তারপর পঁচিশ ফুটের মাথায় একতলা বাড়ির মতো টিনের ছাউনি দেওয়া হয়। ময়মনসিংহের ভালুকা, ত্রিশাল, গাজীপুর ও সিলেট এলাকায় মাটির ঘর এখনো দেখা যায়।

‘মাটির মায়া’ ইকো রিসোর্ট: প্রকৃতির কোলে শান্তির এক ঠিকানা

মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট বাংলাদেশের প্রথম মাটি দিয়ে তৈরি রিসোর্ট, আর আধুনিকতার এই সময়ে আমরাই প্রথম এই কঠিন এবং বন্ধুর প্রকল্প চিন্তা করেছি এবং অনেকটাই বাস্তবসম্মত রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি । প্রকৃতির গভীরে অবস্থিত এই রিসোর্টটি অতিথিদের পরিবেশের সাথে সংযোগ স্থাপনের এক অনন্য সুযোগ তৈরি করে, যেখানে আধুনিক আরামদায়ক সুবিধগুলোর সাথে মিলেমিশে থাকে সবকিছু। কাদামাটি ব্যবহার করে নির্মিত টেকসই আর্কিটেকচার এবং পরিবেশ রক্ষার প্রতি উৎসর্গীকৃত থাকার ব্যবস্থা মাটির মায়া ইকো রিসোর্টকে বাংলাদেশের ইকো-ট্যুরিজমের এক অনন্য দৃষ্টান্তে পরিণত করেছে।

এই রিসোর্টটি খুব দ্রুতই প্রকৃতিপ্রেমী, পরিবার এবং পরিবেশ সচেতন ভ্রমণকারীদের কাছে একটি আশ্রয়স্থল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে, যারা নগর জীবনের দ্রুত গতির থেকে একটু বিরতি নিয়ে শান্তি খুঁজতে চান। সবুজে ঘেরা পরিবেশে অবস্থিত রিসোর্টটি প্রকৃতির নিস্তব্ধতা ও সৌন্দর্যের মধ্যে অতিথিদের সম্পূর্ণভাবে ডুবে থাকার সুযোগ করে দেয়। স্থাপত্য, খাবার এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট টেকসইতা, সরলতা এবং পরিবেশের সাথে সমন্বয়ের মূল নীতিগুলো মেনে চলে।

মাটির মায়া ইকো রিসোর্টের ইতিহাস ও দর্শন

মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট একটি এমন প্রকল্প হিসেবে পরিকল্পিত হয়েছিল, যা ইকো-ফ্রেন্ডলি পর্যটনের সারাংশকে ধারণ করে এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কাদামাটির ঘরের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে। রিসোর্টের প্রতিষ্ঠাতারা এমন একটি স্থান তৈরি করার লক্ষ্য নিয়েছিলেন, যা শুধু সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হবে না, বরং টেকসই এবং দায়িত্বশীল হবে। বাংলাদেশের গ্রামীণ ইতিহাসে কাদামাটির ঘরগুলোর পরিচিতি অনেক আগে থেকেই, কারণ সেগুলো প্রাকৃতিকভাবে শীতল এবং পরিবেশের ওপর ন্যূনতম প্রভাব ফেলে।

blank

রিসোর্টের নাম “মাটির মায়া” মূলত ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য এবং গ্রামীণ জীবনের সরলতাকে সম্মান জানায়। রিসোর্টের মূল দর্শন পরিবেশ সচেতনতার চিন্তা চেতনাকে সমৃদ্ধ করে। রিসোর্টের প্রতিটি দিক, স্থাপনা থেকে শুরু করে বাগান ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবকিছুই কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হয়েছে।

স্থাপত্য: ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা এবং টেকসই


মাটির মায়া ইকো রিসোর্টের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর স্থাপত্য। প্রতিটি ঘর কাদামাটি দিয়ে তৈরি, যা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত প্রাচীন নির্মাণ পদ্ধতি। এই মাটির ঘরগুলো প্রাকৃতিকভাবে শীতল, যা গ্রীষ্মের গরমে ঘর ঠাণ্ডা রাখে এবং শীতকালে উষ্ণ রাখে। এর ফলে রিসোর্টটি প্রাকৃতিকভাবে শক্তি সঞ্চয় করে, যা বৈদ্যুতিক শীতলকরণ বা গরম করার প্রয়োজনীয়তা কমায়।

মাটির মায়া ইকো রিসোর্টের মাটির ঘরগুলোর পরিবেশগত সুবিধা ছাড়াও এগুলো দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ঘরগুলোর মাটির রঙ এবং প্রাকৃতিক আকৃতি প্রকৃতির সাথে সম্পূর্ণ মিশে যায়, যেন তারা প্রকৃতির এক অংশ। ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ জীবনের সরলতাকে মনে করিয়ে দেয় এই আর্কিটেকচার, তবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সাথে তৈরি যা অতিথিদের আরামদায়ক বসবাস নিশ্চিত করে।

আবাসন: প্রকৃতির সহজাত রূপ এবং আধুনিক আরামের মিশ্রণ

মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে এখন পর্যন্ত দুই ধরনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে— নিচতলায় রয়েছে ‘স্ট্যান্ডার্ড রুম ‘, আর তার উপরে রয়েছে ‘প্রিমিয়াম রুম‘। প্রতিটি ঘর এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে অতিথিরা প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত হতে পারেন। রিসোর্টের ঘরগুলো সরল কিন্তু আকর্ষণীয়, বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধারণ করে, এবং একই সাথে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে।

blank

খাবার: স্থানীয় স্বাদের পরিপূর্ণতা

মাটির মায়া ইকো রিসোর্টের খাবারের অভিজ্ঞতাও এক বড় আকর্ষণ। রিসোর্টে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এবং জৈব উপাদানের উপর ভিত্তি করে তৈরি খাবার পরিবেশন করা হয়। রিসোর্টের রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়, যা তাজা উপাদান দিয়ে তৈরি, এবং রিসোর্টের নিজস্ব অর্গানিক বাগানে উৎপন্ন অনেক উপাদানও এর অন্তর্ভুক্ত। অতিথিরা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন।

blank

কার্যক্রম: প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন

মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট প্রকৃতি ও স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে অতিথিদের সংযোগ স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম প্রদান করে। অতিথিরা প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটানোর পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পান।

  • প্রকৃতির মাঝে হাঁটা এবং পাখি দেখা: রিসোর্টের চারপাশে সুন্দর হাঁটাপথ রয়েছে, যেখানে অতিথিরা পাখি, প্রজাপতি এবং অন্যান্য প্রাণী দেখতে পারেন।
  • সাইক্লিং: অতিথিরা রিসোর্টের রিসোর্টের ভিতর সাইকেল চালিয়ে ঘুরতে পারেন এবং গ্রামীণ জীবনের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।
  • বোটিংঃ রিসোর্টের প্রশস্ত লেকে বোট রয়েছে যেখানে অতিথিরা নৌকা চালাতে পারেন এবং অতিথিরা এখানে ছিপ দিয়ে মাছ ধরতেও পারেন।
blank

টেকসই প্রচেষ্টা

মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট টেকসইতার প্রতি সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রিসোর্টটি পরিবেশের উপর ন্যূনতম প্রভাব রাখার এবং সবকিছুতে পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে কাজ করে।

টেকসই ও অনন্য অভিজ্ঞতা

মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, আধুনিক আরাম এবং টেকসই জীবনের মিশ্রণ।

আসুন এবং শহরের পাশেই জীবনের এই অনন্য অভিজ্ঞতা লাভ করুনঃ